বিশ্বের ১৫টি সহজলভ্য ও পুষ্টিকর খাবার

বিশ্বের ১৫টি সহজলভ্য ও পুষ্টিকর খাবারঃ

খাবার নিয়ে আমাদের মনে অনেক সময় প্রশ্ন আসে! যেমনঃ আদর্শ খাবার বলতে কি কিছু আছে? বা এমন কোনো খাবার আছে যা খেলে আমাদের সব ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়? এমন কোনো খাবার আসলে নেই। তবে কিছু খাবার রয়েছে যা অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ, তাই এগুলোকে সুষম খাদ্য বলা হয়।এগুলো আমাদের দেহের বেশিরভাগ পুষ্টির যোগান দিতে পারে। বিশ্বের ১০০০টি খাবারে মধ্য থেকে সবচেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ রয়েছে এমন ১০০টি খাবারে তালিকা করেছেন যুক্তরাজ্যের গবেষকরা। এইগুলো যেমন বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার, তেমনি সহজলভ্য। তাই প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এসব পুষ্টিকর খাবারের জুড়ি নেই।

বিশ্বের ১৫ টি সহজলভ্য ও পুষ্টিকর খাবার

১.অ্যামন্ড বা আখরোটঃ
এই ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর যাতে প্রচুর আমিষ এবং অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি আসিড আছে।প্রতি ১০০ গ্রাম আখরোটে ১৫.২ গ্রাম প্রোটিন, ৬৫.২ গ্রাম স্নেহ পদার্থ এবং ৬.৭ গ্রাম
ফাইবার থাকে।হার্ট ভালো রাখতে এবং ডায়বেটিকস নিয়ন্ত্রনে রাখতে আখরোট সাহায্য করে।পুষ্টিবিদদের মতে,৪-৫ টি আখরোট পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে পারেন।
এভাবে খাওয়া হলে উপকার বেশি পাওয়া যেতে পারে৷এছাড়াও দুধ ও মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে এর পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়।
২.আতাফলঃ
আতাফলে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন সি, বি১, বি২ এবং পটাশিয়াম।ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য আতাফল উপকারি ভূমিকা রাখতে পারে। এটি ভিটামিন বি সমৃদ্ধ, যা হাঁপানি প্রতিরোধে সাহায্য করবে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকায় আতাফল ত্বক, চুল এবং চোখের জন্য উপকারী। আতাফল গর্ভপাতের ঝুঁকি হ্রাস করে। গর্ভাবস্থায় আতাফল খেলে সকালের দুর্বলতা দূর হয় এবং শারীরিক ব্যথার উপশম ঘটায়।
৩.চিয়া সিড বা তিসি বীজঃ
চিয়া সিড বা তিসি বীজে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ডায়েটারি ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন, লিনোলেনিক এসিড ও ফেনোলিক এসিড। পাশাপাশি এটি ভিটামিন এ , বি, ই, ডি এবং সালফার, আয়রন, আয়োডিন, ম্যাগনেসিয়াম, নিয়াসিন এবং থায়ামিন সহ খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির একটি প্রধান উৎস। চিয়া সিড বা তিসি বীজ শরীরের ওজন কমাতে ও হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।এছাড়াও এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিসি বীজ রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। যা ইনসুলিন তৈরিতে সহায়তা করে।
৪.বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছঃ
বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছের মধ্যে সামুদ্রিক কই বা পোয়া মাছ সবচেয়ে পুষ্টিগুন সম্পন্ন।এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্যামন, ইল, সামুদ্রিক চিতল বা ফ্যাট ফিশ। সামুদ্রিক মাছে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি।সামুদ্রিক মাছের গুনাগুণের শেষ নেই। ইলিশ, কোরাল, রূপচাঁদা, বাইলা, চিংড়ি, ফোঁপা,
লইট্টা ও লাইখ্যা সহ প্রভৃতি মাছে আছে প্রচুর মিনারেল ও ভিটামিন।মস্তিকের ক্ষমতা বৃদ্ধি,দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি,হৃদরোগ প্রতিরোধ,কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদিতে সাহায্য করে।
৫.মিষ্টি কুমড়া ও বীজঃ
মিষ্টি কুমড়া ও বীজ আয়রন ও ম্যাঙ্গালিনের খুবই ভালো উৎস। কাচা কিংবা পাকা যেটিই হোক আর যে জাতেরই হোক না কেনো মিষ্টি কুমড়ার গুনের কোন কমতি নেই। মিষ্টি কুমড়ায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ (বিটা-ক্যারোটিন), ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, জিঙ্ক, ফসফরাস, কপার, ক্যারটিনয়েড এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস।
৬.ধনিয়াপাতাঃ
শুকনো ধনিয়াপাতার গুড়ো বা ধনিয়াপাতা পুরোটাই পুষ্টিগুনে ভরপুর। এতে থাকে ক্যারটিনয়েড যা হজমে সমস্যা, কাশি, বুকের ব্যাথা এবং জ্বর উপসর্গ সারাতে খুবই সাহায্য করে থাকে।
৭.মটরশুটি ও বরবটিঃ
প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, মিনারেল এবং দ্রবনীয় ভিটামিন রয়েছে মটরশুটিতে। বরবটি সবজি এবং বীজ বা ডাল সব কিছুতেই রয়েছে পুষ্টি।উচ্চ মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন রয়েছে এতে। বরবটি কোলেস্টেরলের পরিমান কমিয়ে দিয়ে হার্টকে সুরক্ষা নিশ্চিত করে। প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় মটরশুঁটি কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে সাহায্য করে।
৮.লাল ও সবুজ বাধাকপিঃ
শীতের সবজি বলতে যেগুলোর কথা মাথায় আসে, তার মধ্যে অবশ্যই থাকে বাঁধাকপি।এক কাপ বা ৯০ গ্রাম বাঁধাকপিতে রয়েছে ২২ ক্যালরি শক্তি। প্রোটিন আছে ১ গ্রাম, ফাইবার ২ গ্রাম।বাধাকপি ফাইবার হজমে সহায়তা করার পাশাপাশি মন্দ কোলেস্টেরল কমায় এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে। পাকস্থলী ও অন্ত্রের ভেতরের অংশকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পাকস্থলীর আলসার নিরাময় করে।
৯.পালংক শাকঃ
পালংক শাকে মজুত রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অ্যন্টিঅক্সিডেন্ট। সেই সঙ্গে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, ফলেট, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং আরও নানাবিধ ভিটামিন এবং খনিজ। এইগুলি শরীরে প্রবেশ করার পর ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। তাই নিয়মিত পালংক শাক খাদ্য তালিকায় রাখলে অতিরিক্ত মেদ ঝরে যায়।
১০.পাতাসহ পেয়াজঃ
পাতাসহ বিভিন্ন ধরনের পেয়াজ, ডগা সহ ফুলে প্রচুর ভিটামিন রয়েছে। বিশেষ করে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন কে এর ভালো উৎস এটি। এছাড়া পেয়াজ পাতাও ভালো কাজ করে।
১১.পুদিনাঃ
পুদিনাপাতা ত্বক, চুল ও শরীর—তিনটির জন্যই খুব উপকারী।খুব দ্রুত ব্রণ দূর করতে পুদিনাপাতা দারুণ কাজ করে।পুদিনাপাতার রস শ্বাসপ্রশ্বাসের নালি খুলে দেওয়ার কাজে সহায়তা করে। ফলে অ্যাজমা এবং কাশির সমস্যায় পুদিনাপাতা বেশ কার্যকর। পুদিনাপাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে সেই পানির ভাপ নিলে এবং গার্গল করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
১২.মরিচঃ
কাঁচা মরিচে আছে রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, থিয়ামিন, ডায়েটারি ফাইবার ইত্যাদি। এছাড়াও কাঁচা মরিচে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, কপার, পটাসিয়াম, ভিটামিন এ, সি, কে, বি৬। আর এই সবগুলো উপাদানই আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী।
১৩.কলাঃ
একটি মাঝারি মাপের কলা থেকে শরীরে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম প্রবেশ করে। যা হৃদযন্ত্র ভালো রাখে।এতে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম হাড় শক্ত রাখে। পেট পরিস্কার রাখার পাশাপাশি হজমেও সাহায্য করে কলা। একটি কলায় থাকে ৩ গ্রাম ফাইবার। যা খুব তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়।
১৪.টমেটোঃ
টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, কে, ফলেট এবং পটাসিয়াম। টমেটো থেকে আরও পাওয়া যায় থায়ামিন, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং কপার। এ ছাড়াও এই এক কাপের টমেটোর মধ্যেই থাকে দুই গ্রামের মতো ফাইবার। অনেকটা পানিও রয়েছে এর মধ্যে। চর্মরোগের জন্য টমেটো
অত্যন্ত কার্যকর। রক্তস্বল্পতা দূরীকরণে সাহায্য করে। সর্দি-কাশি প্রতিরোধেও টমেটো বেশ কার্যকর।
১৫.ডালিমঃ
ডালিম রসে ফ্রুক্টোজ থাকলেও এটি অন্য ফলের রসের মতো রক্তে চিনির মাত্রা বাড়ায় না। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত ডালিম রস খেলে রক্তে চিনির মাত্রা ঠিক থাকে। ডালিম ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, হজমশক্তি এবং হিমোগ্লোবিন এর পরিমাণ বাড়ায়।

For Technical Support

Leave a Comment